
মানব সভ্যতার ইতিহাস এর যেমন রয়েছে ধারাবাহিকতা, তেমনি প্রকৃতির ও আছে নিজস্ব ধারাবাহিকতা। অন্তত মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়কাল তেমনি সংকেত দেয়। প্রাচীনকালের শিকারের উপর বহুবার সংক্রামিত হয়েছে নানা সংক্রামণে। সংক্রামিত রোগের ইতিহাস পাওয়া যায় ১০ হাজার বছর আগেও। কখনো রোগ এশিয়া থেকে ছড়িয়ে ইউরোপ পর্যন্ত গিয়ে থেমেছে। কখনো শুরু হয়েছে আফ্রিকা অঞ্চল থেকে যা ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। তবে আধুনিক সভ্যতার যুগে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছিল ১৬৬৫ সালে। বুবনিক প্লেগ লন্ডনের জনসংখ্যা থেকে ২০% লোক কমিয়ে দিয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল প্রাণী থেকে ছড়িয়েছিল এই রোগ পাই নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল সব প্রাণীদের। এরপর বড় মহামারী হিসেবে এসেছে কলেরা পানিবাহিত রোগ ছড়িয়েছে রাশিয়া থেকে। ১৮১৭ সালে শুরু হওয়া এই কলেরায় প্রাণ হারায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ। দূষিত পানি বাহিত এই রোগ ছড়িয়ে যায় ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে এরপর তারা ছড়াতে থাকে ভারত, স্পেন আফ্রিকা ইন্দোনেশিয়া চীন জাপান ইতালি জার্মানি ও আমেরিকায়। প্রাণ হারায় কয়েক লাখ মানুষ কলেরার সেই মহামারীতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ২২ থেকে ২৩ লাখ। এরমধ্যে এশিয়ায় প্রাণহানি হয়েছিল এক লাখেরও বেশি। দূষিত পানি থেকে ছড়িয়ে পড়া এই রোগের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ১৮৫৫ সালে শুরু হয় প্লেগ। সেবারও শুরু হয় চীন থেকে পড়ে তা ছড়িয়ে যায় ভারত ও হংকংয়ে। এ মহামারীর সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছিল ভারতে। একে কেন্দ্র করে ভারতে শুরু হয় রাজনৈতিক পরিবর্তন। শতকটি ছিল মানব সভ্যতার ইতিহাসে মহামারীর কবলে আক্রান্ত সব থেকে বড় কাল। ১৮৮৯ সালে শুরু হয় রাশিয়ান ফ্লু। সাইবেরিয়া ও কাজকস্থান থেকে শুরু হওয়া রোগ ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ইউরোপ, আমেরিকা ও অাফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। ১ বছরের মধ্যে প্রাণ হারায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। পরবর্তী আঘাতের জন্য মোটে ৩ দশক সময় পেয়েছিল বিশ্ববাসী। ১৯১৮ সালে শুরু হয় এযাবৎকালের সব থেকে ভয়ঙ্কর মহামারী। তখনো আবিষ্কার হয়নি সালফার ড্রাগস ও পেনিসিলিনের। এ মহামারীতে প্রাণহানী ঘটে বিশ্বের নানা অঞ্চলের ৫ কোটি মানুষের। স্প্যানিশ ফ্লু নামের এ মহামারীর শুরু চীনে। চীনা শ্রমিকদের মধ্য দিয়ে কানাডা হয় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে। দ্রুত মহামারী আকারে ছড়িয়ে যাওয়ায় এর নাম দেয়া হয় স্প্যানিশ ফ্লু। এখানে আক্রান্ত হয় ৮০ লাখ মানুষ। গোটা বিশ্ব সংক্রমনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০ কোটি। ১৯৫৭ সালে চীন থেকে ছড়িয়ে যাওয়ার এশিয়ান ফ্লুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১ লাখের বেশি। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া ভাইরাস এইডস্ আবিষ্কৃত হয় ১৯৮১ সালে। ততদিনে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাণীবাহিত ভাইরাস ইবোলা। মধ্য আফ্রিকার উত্তরাংশে কঙ্গো উপত্যকায় প্রবাহিত ইবোলা নদী থেকে এর নামকরণ করা হয় ১৯৭৬ সালে। মার্বুক ভাইরাসের সাথে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে যা আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। আফ্রিকার কঙ্গো সবথেকে বড় আঘাত হেনেছিল ইবোলা। কিছু প্রাণীর শরীরের রক্তে ভাইরাস বসবাস করে। বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে সকল প্রাণী ভাইরাস বহন করে তারা কয়েক প্রজাতির বানর। কেবলমাত্র ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের তরল পদার্থ নিষ্কাশনের মাধ্যমে এই ভাইরাস স্থানান্তরিত হয়। এবারে আঘাত হানলো সর্বশেষ আঘাত হানলো এবারের করোনাভাইরাস যা পুরো বিশ্বকে থমকে দিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে বড় বড় আর্থিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম। চীন থেকে উৎপন্ন হওয়া এ ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার প্রায় দেড় লাখ মানুষ। সংক্রমণ হয়েছে প্রায় ২২ লাখ মানুষের মধ্যে। এর মধ্যেই মহামন্দার অবস্থা শুরু হয়েছে গোটা বিশ্বই রয়েছে জরুরী অবস্থার মধ্যে। প্রতি শতাব্দীতেই আসা এসকল মহামারী বারবার প্রমাণ করে মানুষের প্রকৃতির উপরে যে অধিকার তাতে রয়েছে অদৃশ্য এক সীমানা। যখনই মানুষ সে সীমা অতিক্রম করে শুধু অগ্রগতির কথা ভেবেছে প্রকৃতি যেন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এসে নির্মল করেছে মানুষের সেই সকল অর্জন। আর বারবারই বলছে শাসন নয়, সহাবস্থানেই সম্ভব জীবনকে যাপন করা।
আরও সংবাদ
শেখ হাসিনার কারাবরণ ও তার পূর্বাপর
পিরোজপুরে করোনায় আক্রান্ত’র সংখ্যা ২ শতাধিক, সুস্থ শতাধিক, মৃত্যু ৫
পিরোজপুরে করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে তরুন তরুনীর মাস্ক ও লিফলেট বিতরন